বিড়ালের নখর ছাঁটাই করা আপনার পোষা প্রাণীর স্বাস্থ্য বজায় রাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। একটি দ্রুত ট্রিম কেবল আপনাকে, আপনার বিড়াল এবং আপনার পরিবারকে দুর্ঘটনাজনিত খোঁচা থেকে রক্ষা করে না, বরং এটি আপনার সোফা, পর্দা এবং অন্যান্য আসবাবপত্রকেও সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে।
বিড়ালের নখের যত্ন নেওয়া একটি সহজ তবে কার্যকর উপায়, যা সকলের জন্য একটি শান্তিপূর্ণ বাসস্থান নিশ্চিত করে।
চলুন জেনে নিই কি দিয়ে এবং কীভাবে নিরাপদে আপনার বিড়ালের নখ কাটবেন।
বিড়ালকে শান্ত করে, সঠিক নেইল ক্লিপার দিয়ে, নখের গোলাপি অংশ ছাড়িয়ে সাদা অংশটি ধীরে ধীরে কাটতে হয়। বিড়ালের নখ কাটার নিয়ম ধারাবাহিকভাবে নিচে বর্ণনা করা হলো-
একটি শান্ত ও আরামদায়ক পরিবেশে বিড়ালকে কোলে নিয়ে বসুন এবং কয়েক মিনিট বিড়ালকে আদর করুন। বিড়াল যাতে ভয় না পায় সেদিকে খেয়াল রাখুন।
যদি আপনার বিড়াল খুব নড়াচড়া করে, তাহলে ধৈর্য ধরুন এবং ধীরে ধীরে শুরু করুন। বিড়ালকে জোর করবেন না। বিড়ালের পা ম্যাসাজ করুন।
একবার একটি করে পা ধরে নিন এবং পায়ের তলার মাংসে আপনার বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে হালকা করে চাপ দিন এবং অপর আঙ্গুল দিয়ে বিড়ালের পায়ের উপর দিকটি ভালো ধরুন। এতে করে নখগুলো থাবা থেকে বের হয়ে আসবে।
খুব বেশি নখ কাটবেন না, শুধুমাত্র নখের আগার অংশটি কাটুন। নখ যেখান থেকে বাঁকানো শুরু করে সেখান থেকে কাটতে হবে।
নখের ভেতরে গোলাপি রঙের একটি জায়গা দেখা যায়। নখ কাটার সময় অবশ্যই গোলাপি অংশের পর থেকে কাটতে হবে, নাহলে রক্তক্ষরণ শুরু হতে পারে।
নখ কাটার পর বিড়ালের খেলনা দিয়ে বা পছন্দের খাবার দিয়ে আনন্দিত করুন। যদি বিড়াল অস্বস্তি বোধ করে বা ভয় পায়, তাহলে তাকে একটু সময় দিন এবং পরে আবার চেষ্টা করুন।
নোট: যদি আপনি নিজে বিড়ালের নখ কাটতে অস্বস্তি বোধ করেন, তাহলে কোনো পেশাদার পশু চিকিৎসকের সাহায্য নিন।
সতর্কতা:
যদি দুর্ঘটনাবশত বিড়ালের নখ কাটতে গিয়ে নখের রক্তনালী কেটে যায়, তাহলে রক্ত থামানোর জন্য পাউডার ব্যবহার করুন এবং পরবর্তীতে কোনো পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
বিড়ালের নখ কাটার যন্ত্রের নাম হল Cat Nail Clipper। ক্যাট নেইল ক্লিপার দিয়ে আপনি বিড়ালের নখ সঠিক পরিমাণে কাটতে পারবেন। এটি দিয়ে বিড়ালের নখ কাটলে নখের রক্তনালী কাটার ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। এছাড়া এটি ব্যবহার করা খুবই সহজ।
অনেকদিন যাবত নখ কাটার ফলে ক্লিপারের ধার কমে গেলে নতুন Nail Clipper ব্যবহার করুন।
বিড়ালকে ছোটবেলা থেকেই নখ কাটার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ছোটবেলা থেকেই এই ধরনের প্রশিক্ষণ বিড়ালের সাথে আপনার বন্ধনকে আরও মজবুত করবে এবং ভবিষ্যতে নখ কাটার সময় কোন সমস্যা হবে না। এতে করে বড় হয়ে সে নখ কাটার সময় শান্ত থাকতে শিখবে।
বিড়ালকে আদর করার সময় কিছুক্ষণ বিড়ালের গায়ে হাত বুলানোর পর তার একটি পা ধরে ম্যাসাজ করতে থাকুন। পায়ের তলায় বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে চাপ দিন । এতে করে তার নখ বের হয়ে আসবে। এভাবে কয়েকবার করলে সে এটির সাথে অভ্যস্ত হয়ে যাবে।
এরপরে বিড়ালের নখ বের করার সময় কোন শক্ত জিনিস নেইল ক্লিপারের সাহায্যে কাটবেন এতে করে শব্দ হবে। এটির সাথে বিড়াল অভ্যস্ত হয়ে যাবে।
যে নেইল ক্লিপার দিয়ে বিড়ালের নখ কাটবেন, সেটি দিয়ে কয়েকদিন আগে থেকেই বিড়ালের পায়ের স্পর্শ করাবেন। যাতে এটাকে সে ভয় না পায়। নেইল ক্লিপারের সাথে বিড়ালকে অভ্যস্ত করতে পারলেই সহজে নখ কাটা যাবে।
আপনি মোটামুটি এক সপ্তাহ এভাবে করতে থাকলে বিড়াল এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ অভ্যস্ত হয়ে যাবে।
একটি শান্ত এবং আরামদায়ক জায়গা বেছে নিন। এতে করে শান্তভাবে নখ কাটা সম্পন্ন হবে। বিড়াল যখন শান্ত থাকে তখনই নখ কাটার চেষ্টা করুন। খাবার খাওয়ার পর যখন বিড়াল ঘুম ঘুম অনুভব করে, সেই সময় নখ কাটা সবচেয়ে ভালোও উপযুক্ত সময়।
বিড়ালের নখ কাটার সময় কয়েকটি জিনিসপত্র প্রয়োজন হবে যেমন-
একটি ধারালো Nail Clipper
বিড়ালের পছন্দের খাবার বা খেলনা এবং
রক্তপাত হলে ব্যবহারের জন্য স্টাইপটিক পাউডার রাখুন।
মনে রাখবেন, নখ কাটা বিড়ালের জন্য একটা নতুন অভিজ্ঞতা এবং তারা এতে অস্বস্তি বোধ করতে পারে। তাই ধৈর্য ধরুন এবং কখনোই তাকে বকা দিবেন না। ধীরে ধীরে, কয়েক বারে নখ কাটুন। কয়েকটি নখ কাটা হলে বিড়ালকে খাবার বা খেলনা দিন।
একবারে সব নখ কাটার চেষ্টা করবেন না। প্রথম দিকে দুই-তিনটি নখ কাটুন এবং পরে ধীরে ধীরে সংখ্যা বাড়িয়ে নিন। এইভাবে বিড়াল এই প্রক্রিয়ার সাথে মানিয়ে নিতে পারবে।
বিড়ালের আঁচড় খুব সাধারণ ঘটনা। সাধারণত, বিড়ালের আঁচড় চামড়ার উপরিভাগে হয় এবং রক্তপাত হয় না। এই ধরনের আঁচড়ে সাধারণত ভয় পাওয়ার কোনো কারণ থাকে না। কিন্তু, যখন আঁচড় গভীর হয় এবং ক্ষত সৃষ্টি করে, তখন সতর্ক থাকা জরুরি।
বিশেষ করে ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বিড়ালের আঁচড় বড় সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। অনেক সময়, বিড়ালের আঁচড়ের ফলে বাচ্চাদের জ্বর, কাঁপুনি, ছোট ফোসকা, পিঠ বা পেট ব্যথা হতে পারে। এই ধরনের লক্ষণকে ‘ক্যাট স্ক্র্যাচ ডিজিজ’ বলে। এই রোগটি বিশেষ ধরনের জীবাণুর সংক্রমণের ফলে হয়।
আঁচড়ের পরপরই এই লক্ষণগুলো না দেখা দিলেও, সাত থেকে চৌদ্দ দিনের মধ্যে এই লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে। তাই, বিড়ালের আঁচড়ের পর বাচ্চার শরীরে এই ধরনের কোনো লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
প্রতিমাসে অন্তত একবার বিড়ালের নখ নিয়ম করে কাটা উচিত। কেননা-
বাড়ির বিভিন্ন আসবাবপত্র বিড়ালের আঁচড়ের কারনে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
বিড়ালের লম্বা নখ মানুষের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। ছোট বাচ্চারা বিড়ালের সাথে খেলা করার সময় যদি কোন কারণে বিড়াল ব্যথা পেয়ে রেগে যাই তাহলে আঁচড়ে দিতে পারে।
বিড়ালের নখ বেশি বড় হয়ে গেলে নখ বেঁকে যায় এবং বিড়াল হাটার সময় ব্যথা পায়।
বড় নখে ময়লা এবং রোগজীবাণু আঁটকে থাকে।
বিড়ালের নেইল ক্লিপার সাধারণত কেচির মত করে ব্যবহার করা যায়।
বিড়াল যদি আঁচড় দেয় এবং রক্তপাত না হয়, তাহলে সাধারণত চিন্তার কারণ নেই। জীবাণুনাশক দিয়ে আঁচড়ের জায়গাটা ভালো করে পরিষ্কার করে নিন। কিন্তু, যদি আঁচড় গভীর হয় বা বেশি রক্তপাত হয়, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
নখের সাদা অংশটিই কাটবেন। গোলাপি অংশটি কাটলে রক্তক্ষরণ হতে পারে।
সাধারণত প্রতি চার সপ্তাহে একবার অর্থাৎ প্রতিমাসে একবার বিড়ালের নখ কাটা উচিত।
শেষ কথা
বিড়ালের নিয়মিত নখ কাটা আপনার বাড়ির আসবাবপত্রকে ক্ষতি হওয়া থেকে রক্ষা করবে এবং বিড়ালের আকস্মিক আঁচড় থেকে আপনাকে বাঁচাবে। তাই সঠিক নিয়ম মেনে ধৈর্য ও স্নেহের সাথে বিড়ালের নখ কাটুন।
Was this post helpful?
0
0